শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :
সাকিবুর রহমান চৌধুরী (৩১)। বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার দেলিআই বাজারে। ঢাকায় একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানির কন্ট্রোলার অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে থাকেন মিরপুর ১৪ নম্বরের হাউজিং স্টাফ কোয়ার্টারে। ১১ বছর আগে সাকিবুর দম্পতির কোল আলোকিত করে ফুটফুটে পুত্র সন্তান। ছেলের নাম রাখেন সাফকাত সামির। একমাত্র ছেলেকে মাদরাসায় নুরানী পড়ার জন্য ভর্তি করেন সাকিবুর।
কিন্তু ছেলেকে মাদরাসায় পড়ানোর স্বপ্ন পূরণ হলো না সাকিবুরের। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে দুষ্কৃতকারীর গুলিতে মুহূর্তেই সন্তানহারা হন সাকিবুর। গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সাফকাত সামির (১১) ও তার চাচা মশিউর রহমান (১৬) বাসার বেডরুমে জানালার পাশে টেবিলে বসে পড়াশোনা করছিল। এসময় দুষ্কৃতকারীর একটি গুলি মশিউরের ডান কাঁধ ভেদ করে সামিরের ডান চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। সামিরকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। আর মশিউরকে ১৪টি সেলাই দেন।
শিশু সামিরের মৃত্যুর ঘটনায় বাবা সাকিবুর রহমান গত ২৬ জুলাই রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় দণ্ডবিধির ৩২৬/৩০৭/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। সামিরের বাবা সাকিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান সামির। তাকে মাদরাসা লাইনে নুরানী পড়াতাম। আশা ছিল ছেলে অনেক বড় হবে। তাকে এভাবে হারাতে হবে কখনো ভাবিনি। বাবার হত্যা মামলা, ‘দুষ্কৃতকারীর গুলিতে’ পড়ার টেবিলেই লুটিয়ে পড়ে ছোট্ট সামিরদুষ্কৃতকারীর বুলেটে শিশু সামিরের চাচাও আহত হয়েছে দুষ্কৃতকারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে সামিরের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার এজাহার গ্রহণ করেছেন আদালত। শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ২ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে সামিরের বাবা উল্লেখ করেন, আমি কাফরুল থানার মিরপুর ১৪ নম্বরের হাউজিং স্টাফ কোয়ার্টারের ১৫/২৭ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করি। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কতিপয় দুষ্কৃতকারী পিওএম পুলিশ লাইনের প্রধান গেটে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন পুলিশের বাধার মুখে দুষ্কৃতকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
পরে পুনরায় সংঘটিত হয়ে আরও ৫০০ থেকে ৭০০ জন দুষ্কৃতকারী হাতে লাঠি, লোহার রড, ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে থাকে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের প্রতিহত করতে গেলে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। তখন আমার ছেলে সাফকাত সামির ও ছোট ভাই মশিউর বেডরুমে জানালার পাশে টেবিলে পড়াশোনা করছিল।
‘এ সময় দুষ্কৃতকারীদের একটি গুলি আমার ছোট ভাইয়ের ডান কাঁধ ভেদ করে আমার ছেলের ডান চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক আমার মেজো ভাই ও স্ত্রী সামির ও মশিউরকে মার্কস হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তৃপক্ষ আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করে ও আমার ভাইকে ১৪টি সেলাই দেয়। পরে আমি ছেলের লাশ নিয়ে আশুলিয়ায় আমার শ্বশুরবাড়ি যাই। পরদিন সকাল ৯টায় ছেলের দাফন সম্পন্ন করি।’ বলেন সামিরের বাবা সাকিবুর। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন দাস বলেন, ‘শিশু সামির নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বাবা সাকিবুর রহমান একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসআই আরও বলেন, ‘সামিরের লাশের ময়নাতদন্ত হয়নি। কবর থেকে লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করবো। আদালতের নির্দেশ পেলে কবর থেকে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্ত করবো।